শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নির্বাচনের পর বাড়ি ফিরেই মারধরের শিকার বিএনপিকর্মী মেয়ের জন্য বিশেষ আয়োজন পরীর মাস্টার্সেও পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কথা ভাবা হচ্ছে: ঢাবি উপাচার্য নৈরাজ্য করলে ডাবল শিক্ষা পাবে বিএনপি, আমরা বসে নেই: ওবায়দুল কাদের জেলেনস্কিকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে উত্তাল ইউক্রেন ‘শয়তানের নিঃশ্বাস‘ নামের যে ড্রাগ প্রতারণায় ব্যবহার হচ্ছে দস্যুর দখলে লক্ষ্মীপুরের দ্বীপ চর মেঘা, বিপাকে দেড়শতাধিক কৃষক নিজ বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত পাইলট আসিম জাওয়াদ মালদ্বীপ থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করেছে ভারত বাংলাদেশের জন্য মনোনীত মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত মিল আগে যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন
কিলার মুসা গুম, নাকি আত্মগোপনে

কিলার মুসা গুম, নাকি আত্মগোপনে

স্বদেশ ডেস্ক:

আদালতে স্ত্রী হত্যার ব্যাপারে জবানবন্দি দেননি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। অন্যদিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন যুবলীগ নেতা এহতেশামুল হক ভোলা। ফলে মিতু হত্যাকা-ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন নিখোঁজ কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা সিকদার। এ অবস্থায় মুসাকে কি গুম করা হয়েছে, নাকি তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেছেন- এখন এ প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আমাদের সময়কে বলেন, মামলার তদন্তে কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এসেছে। হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতার ব্যাপারে পরিষ্কার চিত্র পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালের ২২ জুন নিখোঁজ হন মুসা। তার স্ত্রী পান্না সিকদার বারবার দাবি করে আসছেন যে মুসাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

গত শনিবার বিকালে এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, সোর্স মুসা সিকদারকে দিয়ে নিজের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করিয়েছেন বাবুল আক্তার। রাজি না হওয়ায় মুসাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের ২৭ জুন বাকলিয়া থেকে গ্রেপ্তার হন ভোলা। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল মিতু হত্যার সময় ব্যবহৃত পিস্তল। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে ভোলা পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে পরিচয়, তার অনুরোধে মুসাকে চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে মিতু হত্যার নানা বিষয় তুলে ধরেন। নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করে ভোলা আদালতে বলেন, ২০০৮ সালে মুসা

সিকদারের মাধ্যমে তৎকালীন কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার বাবুল আক্তারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মুসা ছিলেন বাবুল আক্তারের বিশ্বস্থ সোর্স। ভোলা কয়েকটি মামলায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন। বাবুল আক্তার ভোলাকে সেসব মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দেন। এর পর ভোলা ডবলমুরিং থানা এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান দিয়েছিলেন। সেই অস্ত্র উদ্ধার করে বাবুল আক্তার প্রশংসিত হয়েছিলেন, পদকও পেয়েছিলেন।

পরবর্তী সময়ে হাটহাজারী ও কক্সবাজারে বদলি শেষে ২০১১ সালে বাবুল আক্তার আবার নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হয়ে চট্টগ্রামে ফেরেন। ভোলা জবানবন্দিতে বলেন, একদিন তিনি বাবুলের কাছে গেলে সেখানে মুসাকে দেখতে পান। বাবুলের অনুরোধে ভোলা নিজের বালুর ডিপোতে মুসাকে ১৫ হাজার টাকা বেতনে ম্যানেজারের চাকরি দেন। এর কয়েক বছর পর মুসা একদিন ভোলাকে বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের ঝামেলা আছে। বাবুল আক্তার বলেছেন, মুসা যেন বাবুলের স্ত্রীকে ফিনিশ করে দেন। এ জন্য ভোলার কাছে মুসা সহযোগিতা চান। কিন্তু ভোলা রাজি হননি। বাবুল আক্তার একদিন ভোলাকে জিইসি মোড়ে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘মুসাকে একটি কাজ দিয়েছি। তুমি সাহায্য করতে না পারলেও বাধা দেবে না। বাধা দিলে তোমার সমস্যা হবে।’ এতে ভয় পেয়ে যান ভোলা। ওইদিন বাবুল আক্তারের সঙ্গে মুসা এবং ওয়াসিমও (মিতু হত্যা মামলার আসামি) ছিলেন।

ভোলার দাবি, কয়েকদিন পর বাবুল আক্তারের দেওয়া টাকায় মুসা অস্ত্র সংগ্রহ করেন। হত্যাকা-ের জন্য বাবুল মুসাকে মোট তিন লাখ টাকা দেন বলে পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

ভোলার তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে মুসা ফোন দেন ভোলাকে। ভোলা ফোন ধরেননি। বেলা ১১টায় ব্যবসায়িক কাজে খাতুনগঞ্জের একটি ব্যাংকে গেলে টেলিভিশনে দেখেন, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। ভোলা তখন মুসাকে ফোন করেন; কিন্তু মুসার ফোন বন্ধ ছিল। বিকালে মুসা ভোলার অফিসে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। মুসা ভোলাকে বলেন, তার (মুসা) কোনো উপায় ছিল না। মিতু ভাবিকে না মারলে বাবুল আক্তার তাকে ক্রসফায়ারে দিতেন। শুনে ভোলা বলেন, ‘এ কাজটা না করলে বাবুল স্যার হয়ত একবার ক্রসফায়ার দিতো, এখন পুলিশ তো তোকে দশবার মারবে।’ যাওয়ার সময় মুসা অস্ত্রসহ কাপড়ের একটি ব্যাগ রেখে যান। পরে ওই অস্ত্রসহ ভোলা ও কেয়ারটেকার মনির গ্রেপ্তার হন।

আদালতকে ভোলা আরও বলেন, সাড়ে তিন বছর পর জামিনে বেরিয়ে মুসাকে খুঁজতে যান। তখন মুসার স্ত্রী পান্না বলেন, ঘটনার কয়েকদিন পর বাবুল আক্তার মুসাকে ফোন দিয়েছিলেন। মুসাকে নাকি সাবধানে থাকতে বলে দিয়েছিলেন। কয়েকদিন পর আবার ফোন দিলে মুসা ক্ষ্যাপে গিয়ে বলেন, আপনার জন্য এতবড় কাজ করলাম, এখন যদি পরিবারের ক্ষতি হয় তা হলে মুখ খুলে দেব। এর পর থেকে মুসা নিখোঁজ।

মিতু হত্যার পর ২০১৬ সালের ২৫ জুন ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাবুল জানান, তিনি মুসাকে চেনেন না। তবে ১২ মে বাবুল আক্তার জিজ্ঞাসাবাদে মুসাকে চেনার কথা স্বীকার করেন বলে পিবিআই জানায়।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে গুলি ও ছুরিকাঘাত খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদরদপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তাতে উল্লেখ করেছিলেন, জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে খুন করতে পারে। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে মিতুর বাবা অভিযোগ করেন, মিতু হত্যায় বাবুল আক্তার জড়িত। দীর্ঘদিন ডিবির তদন্তের পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের করা মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর পর দেশজুড়ে চাঞ্চল্যকর মামলাটির ক্রমশ জট খুলতে থাকে।

গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পর দিন মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একই দিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মুসা সিকদার, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু, সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও শাহজাহান মিয়া। মুসা সিকদার ছাড়া বাকিরা কারাগারে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877